কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম

 কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। এখানে ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হবে কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম। এই পোস্টটি পড়লে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানবেন। কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম নিয়ে অনেক চমকপ্রদ তথ্য তুলে ধরা হবে।

কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানতে এই লেখাটি পড়ুন। যারা কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম নিয়ে একটি বর্ণনামূলক লেখা খুঁজছেন, আজকে তাদের জন্যই আমাদের এই বিশেষ আর্টিকেল লেখা।

পেজ সূচি:

ভূমিকা:

কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম হলো এক বিশাল সময় জুড়ে অসংখ্য ঘটনার সমাবেশ। কম্পিউটারের ইতিহাস মানে কম্পিউটারের বিবর্তন। কিভাবে কম্পিউটারের জন্ম হলো, কিভাবে এর জার্নিটা পরবর্তীকালে এগোতে থাকলো- সবকিছুই এখানে তুলে ধরবো। আপনি খুব সহজ ভাষায়, স্বল্প পরিসরে কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানবেন।

কম্পিউটার কি?

কম্পিউটার শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ 'Compute' থেকে, যার অর্থ গণনা করা। এই যন্ত্রটি শুধু গণনা করার কাজেই ব্যবহৃত হয় না। এটার দ্বারা তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, বিশ্লেষণ, গবেষণা আরো নানা কাজ করা সম্ভব। কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম সম্পর্কে আপনি যতোই গভীরে জানতে পারবেন, ততোই দেখবেন- জন্মলগ্ন থেকে আজ পযর্ন্ত কম্পিউটারের এই যাত্রা কতোটা অভিনব!

কম্পিউটার কে এবং কবে আবিষ্কার করেছেন?

যদিও আমরা জানি যে, আধুনিক কম্পিউটারের জনক হলেন লন্ডনের বিখ্যাত গনিতবিদ ও দার্শনিক চার্লস ব্যাবেজ। তবে তিনি হলেন পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামিং করা কম্পিউটারের জনক। কিন্তু তাঁর হাতেই কম্পিউটারের জন্ম হয় নি। কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে আমরা অন্য কোনো তথ্য পাই।

প্রাচীন চীনে 'অ্যাবাকাস' নামের একটি যন্ত্র দিয়ে গণনার কাজ করা হতো। মূলত সেই অ্যাবাকাস থেকেই কম্পিউটারের মূল কনসেপ্ট আসে। এরপর ধীরে ধীরে এটার বাস্তবায়ন ঘটে। কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম সম্পর্কে আরো সামনে এগোলে আমরা এর বিবর্তনের যাত্রাটা বুঝতে পারবো।

আরো পড়ুন: কোন ভাইরাসের জন্য জন্ডিস রোগ হয়

চার্লজ ব্যাবেজ ১৮২২ সালে বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার তৈরি করেন যেটার নাম হলো- 'ডিফারেন্স ইঞ্জিন'। এরপর ১৮৩৩ সালে তিনি আরেকটি গণনা যন্ত্রের নকশা বানান যেটার নাম ছিলো- 'এনালাইটিকাল ইঞ্জিন'। কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম এইভাবে সামনে এগোতে শুরু করলো।

পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার:

আপনারা কি জানেন, পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার কোনটি? পেনসেলভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুর স্কুল অব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জন মুসলি এবং তার ছাত্র প্রেসপার একার্ট ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করে এনিয়াক (ENIAC) তৈরি করেন।

এর ফুল ফর্ম হলো- Electronic Numerical Integrator and Computer (ENIAC)। এটাই হলো পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার। কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম জানতে আমরা আরো গভীরে প্রবেশ করছি। মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।

কম্পিউটারের প্রকারভেদ:

এবার আমরা জানবো কম্পিউটারের প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত। কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম সম্পর্কে জানলে এর প্রকারভেদ সহ আরো অনেক চমৎকার তথ্য জানতে পারবেন। প্রকারভেদ অনুসারে কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যগুলোও ভিন্ন হয়ে থাকে। গঠন ও কার্য ভেদে কম্পিউটার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

১. অ্যানালগ কম্পিউটার:

  • অ্যানালগ শব্দটি “Analogous” শব্দ থেকে এসেছে যার আভিধানিক অর্থ 'সদৃশ'।
  • অ্যানালগ কম্পিউটারে বর্ণ এবং সংখ্যা ক্রমাগত পরিবর্তন হয় এবং এটি পরিবর্তনশীল সংকেত বা অ্যানালগ সিগন্যাল ব্যবহার করে।
  • বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে অ্যানালগ কম্পিউটারের ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • অ্যানালগ সংকেতের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পর্যায়ক্রমিক উঠানামা করা।
  • অ্যানালগ কম্পিউটারের ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য 'Operational Amplifier OP-AMP' ব্যবহৃত হয়।

২. ডিজিটাল কম্পিউটার:

  • মূলত 'Digit' শব্দ হতে Digital শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ অংক।
  • বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু হলে ‘1’ এবং বন্ধ হলে ‘O’ এ প্রক্রিয়ায় কার্য সম্পন্ন করে থাকে।
  • ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ট্যাব, পামটপ, ওয়ার্ক স্টেশন এগুলো সবই ডিজিটাল কম্পিউটারের উদাহরণ।

৩. হাইব্রিড কম্পিউটার:

  • অ্যানালগ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বয়ে মিশ্র প্রযুক্তিতে তৈরি।
  • ইনপুট অ্যানালগ প্রকৃতির এবং আউটপুট ডিজিটাল পদ্ধতির।
  • বিশেষ বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয়।
  • গঠন জটিল প্রকৃতির।
  • তুলনামূলকভাবে দাম বেশি।

কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম:

এবার আমরা জানবো কম্পিউটারের প্রজন্ম সম্পর্কে। কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে এর ভিতরে চমকপ্রদ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। কম্পিউটার প্রথম তৈরি করার পর থেকে কিভাবে ধাপে ধাপে এর অগ্রগতি হয়, সেটা জানতে পারবেন। কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম কে ৫ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য নিম্নোক্ত-

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৪৬-১৯৫৯):

  • ভ্যাকুয়াম টিউব ও বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক বর্তনী ব্যবহার।
  • ধীর গতিসম্পন্ন গণনাকারী যন্ত্র।
  • আকারে অনেক বড়।
  • পাঞ্চ কার্ড এর মাধ্যমে ইনপুট -আউটপুট ব্যবস্থা করা হয়।
  • মেশিন ভাষার নির্দেশ প্রদান।
  • মেমোরি হিসেবে ম্যাগনেটিক ড্রামের ব্যবহার।
  • উদাহরণ: ENIAC,EDSAC,BINAC,MARK-1/2/3,IBM-650 প্রভৃতি।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৫৯-১৯৬৫):

  • ট্রানজিস্টরের ব্যবহার।
  • চুম্বকীয় কোর মেমোরি।
  • উচ্চ গতিবিশিষ্ট ইনপুট/ আউটপুট সরঞ্জাম।
  • ফরট্রান ও কোবলসহ উচ্চতর ভাষার উদ্ভব।
  • আকৃতির সংকোচন।
  • তাপ সমস্যার অবসান।
  • গতি ও নির্ভর যোগ্যতার উন্নতি।
  • উদাহরণ: IBM 1400, IBM 1620

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৬৫-১৯৭১):

  • ইনটিগ্রেটেড সার্কিট (IC) বা সমন্বিত চিপ থাকে।
  • অর্ধপরিবাহী ডায়োড, ট্রানজিস্টর এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ থাকে।
  • বিদ্যুত খরচ কমে যায়।
  • কাজের গতি ও নির্ভরশীলতা বহুগুণ বেড়ে যায়।
  • সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার।
  • আকৃতির সংকোচন ও অধিক নির্ভরশীলতা।
  • একই সময়ে একাধিক ব্যবহারকারীর ব্যবহারের সুবিধা।
  • হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যাপক প্রচলন।
  • মনিটরের প্রচলন।
  • মিনি কম্পিউটারের প্রচলন।
  • আউটপুট হিসেবে VDU (Video Display Unit)।
  • উচ্চগতির লাইন প্রিন্টারের প্রচলন শুরু হয়।
  • উদাহরণ: IBM 360, IBM 370

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৭১-বর্তমান):

  • উন্নত চিপ এর ব্যবহার ও ক্ষুদ্রাকৃতির কম্পিউটার।
  • বিশাল পরিমাণ মেমোরি ও অত্যন্ত গতি।
  • টেলিযোগাযোগ লাইন ব্যবহার করে ডাটা আদান-প্রদান।
  • WWW, HTML, DVD, ipod, 2G(2nd Generation) internet, 3G(3rd Generation) internet, WiFi প্রভৃতি চতুর্থ কম্পিউটার জেনারেশনের অন্যতম আবিষ্কার।
  • বর্তমান প্রজন্মের কম্পিউটার গুলো চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার।
  • উদাহরণ: IBM 3033, IBM 4341 প্রভৃর্তি।

পঞ্চম ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৮২-বর্তমান):

  • WAN = Wide Area Network এবং LAN = Local Area Network এর প্রচলন রয়েছে।
  • সমান্তরালভাবে ক্রিয়া করে।
  • একই সময়ে বহু উদ্দেশ্য সাধন করে।
  • প্রক্রিয়াকরণের জ্ঞান সম্পন্ন।
  • একই সাথে একাধিক প্রোগ্রাম বাধাহীনভাবে চলতে পারে।
  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক প্রযুক্তির চরম বিকাশ।
  • কণ্ঠস্বর সনাক্তকরণ ও বিশ্বের সকল ভাষার কম্পিউটার।
  • উদাহরণ: Param 1000, Intel P4, IBM ল্যাপটপ, নোটবুক, এবং Pentium-এর PC।

শেষ কথা:

কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। আশা করি, আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। বিজ্ঞানের চরম অগ্রগতিতে কম্পিউটারের অবদান অনেক। আপনি চাইলে কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম সম্পর্কে আরো অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। সঠিক ও বিশুদ্ধ সোর্স থেকে কম্পিউটারের বিবর্তন নিয়ে আরো চমকপ্রদ তথ্য জেনে নিতে পারেন। আশা করি, কম্পিউটারের ইতিহাস ও প্রজন্ম শীর্ষক এই লেখাটিও আপনার অনেক কাজে লাগবে। (25957)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url