অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম

 অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জেনে নিজের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে পারেন। সুস্থতার জন্য অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জানাটা জরুরী। বাজারের অন্যান্য তেল ব্যবহারের পরিবর্তে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জেনে ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যগুণ বজায় থাকে।

অলিভ অয়েলে স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড রয়েছে এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর মত কার্যকরী উপাদান আপনাকে উপশম দিতে সাহায্য করে। পাশাপাশি অলিভ অয়েল আপনাকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা দিতে পারে। এই পোস্টের মাধ্যমে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

অলিভ অয়েল তেল কোনটা ভালো

রান্নার জন্য অন্যান্য যেকোন কাজে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। সেইক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জেনে ভালোভাবে সঠিক এবং স্বাস্থ্যকর অলিভ অয়েল নির্বাচন করতে হবে। বিশেষ করে আপনি যদি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন, তাহলে খুবই ভালো হবে।
কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ হয়ে থাকে। এই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল প্রক্রিয়াজাত ও পরিশোধিত হয় না বলে এর গুণগত মান বজায় থাকে। এই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।

অল্প কিছু পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকার ফলে হার্টের জন্য এটি খুবই ভালো কাজ করে থাকে। এই অলিভ অয়েল দিয়ে অল্প বা মাঝারি তাপে যদি রান্না করেন, তাহলে খাবার খুবই সুস্বাদু হয়। এছাড়াও এই অলিভ অয়েল বেকিং এবং সালাদ এর জন্য স্বাস্থ্যকর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

অলিভ অয়েল তেল কি খাওয়া যায়

বাঙালি রান্নায় সব ধরনের রান্নাতেই তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই তেল যদি স্বাস্থ্যকর না হয়, তাহলেই অনেক ধরনের সমস্যা হয়। অনেকেই আবার সরিষার তেল ব্যবহার করে। কিন্তু যদি কেউ ডিপ ফ্রাই গ্ৰিলড এইগুলো রান্না করতে যায়, তাহলেও তেলের প্রয়োজন হয়।

কিন্তু সব ধরনের রান্নাতেই সরিষার তেল ব্যবহার করা যায় না। কারণ অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জেনে অতিরিক্ত পরিমাণে তেল ব্যবহার করলে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। অলিভ অয়েল তেল খাওয়া যায় কিনা এই বিষয়ে চলুন জেনে আসি।

১। ঝোল টাইপের তরকারি বা ঝাল এই ধরনের সবকিছুতেই তেল রান্নার দরকার হয়। বাঙালি রান্না করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগই সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আপনার শরীরের জন্য কোন তেল ভালো হতে পারে, সেটা জেনে আপনাকে তেল ব্যবহার করতে হবে।

২। রান্নায় আপনি অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ভোজ্য তেলের পরিবর্তে যদি আপনি অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার শরীরের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

৩। এছাড়াও রান্না করতে যেয়ে আপনি খুব অল্প পরিমাণ অলিভ অয়েল ব্যবহার করেই রান্না শেষ করতে পারবেন। অলিভ অয়েলের মধ্যে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। তাই এটি খুবই স্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে।

৪। বিশেষ করে এই স্বাস্থ্যকর অলিভ অয়েল চর্বি দূর করে আপনার শরীরে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দিয়ে ভালো কোলেস্টেরলকে বাড়িয়ে দিতে পারে। যার ফলে অলিভ অয়েল খাওয়ার ফলে আপনার হৃদরোগ হওয়া সম্ভাবনা কমে যায়।

৫। উচ্চমাত্রায় অলিভ অয়েলকে আপনি যদি গরম করেন, তাহলেও এটি খুব সহজে ভেঙে যায় না। ক্ষতিকর কোন ধরনের রাসায়নিক পদার্থও উৎপন্ন করে না।

৬। অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জেনে যেকোনো ধরনের ডিপ ফ্রাই করতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যখনই রান্না করবেন যদি খাবারে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করেন, তাহলে অনেকেরই সেই খাবার পছন্দ নাও হতে পারে।

৭। তাই অতিরিক্ত তেল দিয়ে তৈরি খাবার অপছন্দের তালিকায় হওয়ার কারণে আপনি অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে অল্পতেই রান্না শেষ হয়। তাই তেলের পরিমাণ খুব বেশি একটা দেখা যায় না।

৮। এছাড়াও আপনি যদি ভোজ্য তেল ব্যবহার করেন, তাহলে তেলের পরিমাণ বেশি থাকলে খাবারের স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এটি সাধারণত অলিভ অয়েলের ক্ষেত্রে হয় না।

৯। রান্না করতে হলে অলিভ অয়েল খুব বেশি একটা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এতে খাবারের স্বাদও খুব ভালোভাবে বজায় থাকে। অলিভ অয়েল এর মধ্যে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। 

১০। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আপনার শরীরে অক্সিডেটিভ চাপকে কমিয়ে দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী রোগকে দূর করে দেয়। এছাড়াও অলিভ অয়েলের মধ্যে ভিটামিন ই ও পলিফেনাল বিদ্যমান থাকে।

১১। যা আপনার শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে এবং আপনার শারীরিক প্রদাহ কমিয়ে দিতে পারে। অন্যান্য যেকোনো ধরনের ভোজ্য তেলের চেয়ে অলিভ অয়েলের টেক্সচার খুবই হালকা হয়।

১২। যার ফলে অলিভ অয়েলের তৈরি খাবার খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে হজমক্রিয়ার সমস্যা দেখা দেয় না। গ্যাস ও অম্বলের সমস্যা হলেও আপনি অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন।

অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম

অলিভ অয়েল তেল বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং এই তেলগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জেনে নিয়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। যেমন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল নামে এক ধরনের অলিভ অয়েল রয়েছে।

যা ব্যবহার করার জন্য আপনাকে সুতার রুমাল এবং সাথে গরম পানি নিতে হবে। হাতের আঙ্গুল দিয়ে অল্প একটু অলিভ অয়েল তেল নিয়ে নাক, গাল, কপাল পুরো শরীরে ভালোভাবে ঘষতে পারেন। রুমালটি চুবিয়ে পানিতে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে আপনার ত্বকে ধরে রাখতে পারেন।
এর ফলে আপনার স্বাভাবিক অবস্থা না আসা পর্যন্ত রুমাল সরাবেন না। তারপর আলতোভাবে মুখ ঘষার চেষ্টা করতে পারেন। পরবর্তীতে একটি তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে পারেন। অলিভ অয়েল এবং লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েল এবং মধুর সাথে একটি ডিম মিশিয়ে অর্থাৎ ডিমের কুসুম ব্যবহার করতে পারেন।

সবগুলো মিশ্রণ একসাথে মিক্স করে পনের মিনিটের জন্য রেখে দিতে পারেন। তারপর গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন। এছাড়াও আপনি অলিভ অয়েল এবং হলুদ মিশিয়েও শরীরের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। আরোও রয়েছে যেমন অলিভ অয়েল এবং ক্যাসটোর অয়েল।

অলিভ অয়েল এবং ভিনেগার একসাথে মিশিয়ে রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি চাইলে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জেনে বিভিন্নভাবে এই অলিভ অয়েলকে ব্যবহার করতে পারেন। সেটি চুলেও হতে পারে বা রান্নার কাজেও হতে পারে। যেকোন কাজে এই অলিভ অয়েল এর ব্যবহার রয়েছে।

ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল কেন

অলিভ অয়েল তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী হয়ে থাকে কারণ ত্বকের নিয়মিত যত্ন করতে হলে অলিভ অয়েল তেল বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সমন্বয়ে এই অলিভ অয়েল আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করে তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জেনে ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে যা হয় তা হলো -
  • ত্বকের রুক্ষ ভাব দূর করে ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে অলিভ অয়েল সাহায্য করে থাকে।
  • পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই এই অলিভয়েলের বিদ্যমান থাকে।
  • পাশাপাশি ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন কে ত্বকের সংবেদনশীল ভাবকে রক্ষা করে।
  • এই অলিভ অয়েল সরাসরি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করলে বেশ উপকার হয়।
  • কনুই বা হাঁটুর ছিলে যাওয়ার মত কোন আঘাত পেলে অলিভ অয়েলের ব্যবহার বেশ কার্যকরী।
  • আপনার মুখের সজীবতাকে ধরে রাখতে অলিভ অয়েল সাহায্য করে।
  • বয়সের ছাপ দূর করতে অলিভ অয়েল বিশেষ সুরক্ষা দেয়।
  • ত্বককে পরিষ্কার রাখতে অলিভ অয়েল নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি

প্রতিদিনের খাবারে আপনি কমবেশি হয়তো তেল ব্যবহার করে থাকেন। সেটি হতে পারে রান্নার মাধ্যমে শরীরে ব্যবহার করে অথবা অন্য যেকোনো মাধ্যমে হতে পারে। কিন্তু এই তেলের মধ্যে অন্য যেকোনো ধরনের ভোজ্য তেল ব্যবহারের পরিবর্তে যদি আপনি অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন, তাহলে এর অনেক ধরনের উপকারিতা আপনি পেতে পারেন।

অলিভ অয়েল মূলত অনেক বেশি পরিমাণে রান্নায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ত্বকেও ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু যদি আপনি রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে সঠিক এবং প্রাকৃতিক একটি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলকে নির্বাচন করতে হবে।
এইক্ষেত্রে সয়াবিন তেলের পরিবর্তে আপনি অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করতে পারেন। কোলেস্টেরল, ক্যান্সার, আর্থারাইটিস, গলব্লাডারের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেনের সমস্যা, জরায়ুর ক্যান্সার এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করতে অলিভ অয়েল তেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এই অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। এতে উপকারী ফ্যাটি এসিড ছাড়াও ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন এ রয়েছে। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আপনাকে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি দিতে পারে।

আপনার রক্তে যখন কোলেস্টেরল কমে যায়, তখন খারাপ কোলেস্টেরলকে দূরীভূত করে ভালো কোলেস্টেরল বিভিন্ন প্রদাহের সাথে লড়াই করতে থাকে। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। অলিভ অয়েল স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

কারণ এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমাতে পারে। এছাড়াও অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম জেনে ব্যবহার করলে এই অলিভ অয়েল রক্তচাপকে কমিয়ে দিতে পারে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়।

অলিভ অয়েল তেলের অপকারিতা

এই এই অলিভ অয়েল তেলের বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে যা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেও পরিচিত। এর অনেক গুণাবলী বিদ্যমান তার পরেও যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ক্ষতিও হতে পারে। অলিভ অয়েল তেলের অপকারিতা হলো - 
  • প্রতিদিনের খাবারে দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হতে পারে।
  • যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা অলিভ অয়েল ব্যবহারে অনেক বেশি সচেতনতা অবলম্বন করবেন।
  • যদি কারো অলিভ অয়েল থেকে অ্যালার্জি বা রেশ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনাকে অলিভ অয়েল ব্যবহার করায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে।
  • যদি আপনি ডায়াবেটিক রোগী হয়ে থাকেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন।

শেষকথা

প্রিয় পাঠকগণ, এই পোস্টে আপনারা অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম, অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও আরো কিছু বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। যদি বিস্তারিত পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আশেপাশের বন্ধুদের জানাতে পারেন। পোস্টের নিচের অংশে মন্তব্য করে আমাদের সাথেই থাকুন। ২৫২৭৫

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url