জিহ্বা ফুলে যায় কেন - জিহ্বা ফুলে যাওয়ার কারণ

 আপনি কি জানেন জিহ্বা ফুলে যায় কেন? যেহেতু জিহ্বা ফুলে যাওয়ার কারণ অনেক রয়েছে তাই আজ আমি আপনাকে জিহ্বা ফুলে যায় কেন তার সকল কারণ বা জিহ্বা ফুলে যাওয়ার যত কারণ বিস্তারিত জানাবো। জিহ্বা ফুলে যায় কেন জানতে নিচে পড়ুন।

অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থেকে শুরু করে আপনার মুখে আঘাত লাগলে জিহ্বা ফুলে যেতে পারে। জিহ্বা ফুলে যাওয়ার কিছু কারণ চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে যেমন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। আপনার জিহ্বার ফোলা একটি বিরক্তিকর হতে পারে কিন্তু এতে তেমন ক্ষতি হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে এটা খুব গুরুত্বরও হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক জিহ্বা ফুলে যায় কেন এবং জিহ্বা ফুলে যাওয়ার যত কারণ আছে সব।

সূচিপত্রঃ জিহ্বা ফুলে যায় কেন

জিহ্বা ফুলে যায় কেন

আপনার জিহ্বা আপনাকে স্বাদ নিতে, গিলতে এবং কথা বলতে সাহায্য করে। কিন্তু কখনো কখনো কোনো সমস্যার কারণে জিহ্বা ফুলে যেতে পারে। সাধারণত একটি ফোলা জিহ্বা বিপজ্জনকের চেয়ে বেশি বিরক্তিকর বা অস্বস্তিকর হতে পারে। তবে অনেক সময় এটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এমনকি যদি আপনার জিহ্বা এতটাই ফুলে যায় যে আপনার জন্য শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তবে এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সিও হতে পারে। নিচে জিহ্বা ফুলে যায় কেন বা জিহ্বা ফুলে যাওয়ার যত কারণ আছে  তা জানাবো।

আপনার জিহ্বাতে কোনো কারণে আঘাত লাগলে

জিহ্বাতে আঘাত লাগা জিহ্বা ফুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে। জিহ্বাতে আঘাত লাগার সব চেয়ে বেশি সম্ভাবণা থাকে দাঁত এর মাধ্যমে। দুর্ঘটনাজনিত বা বাধ্যতামূলক ভাবে কামড়ের কারণে ভাঙা দাঁতের ধারালো প্রান্ত এবং নকল মিথ্যা দাঁত এসব থেকে আমাদের জিহ্বা আঘাত পেতে পারে। আমরা যখন শক্ত কিছু খায় তখন জিহ্বায় আঘাত লাগতে পারে।

আমাদের কামড় লাগার ফলে যদি জিহ্বা কেটে যায় সেখানে খুব ব্যথা হয় এবং জিহ্বা ফুলে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এভাবে জিহ্বা ফুলে গেলে ভয়ের কিছু নাই। কারণ এটা নিজে থেকেই কিছুদিন পর ভালো হয়ে যায়। তবে খুব বেশি কেটে গিয়ে যদি ইনফেকশন হয় তাহলে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

আপনার ব্যবহার করা কোন পণ্যে অ্যালার্জি থাকে

কিছু টুথপেস্ট এবং মাউথওয়াশ এ থাকা উপাদান জিহ্বা ফুলে যাওয়ার কারণ পারে। তাই সেটা ব্যবহার বন্ধ না করা পর্যন্ত আপনার জিহ্বা ফুলে যাওয়ার সমস্যাটি ঠিক হবে না। হাইড্রোজেন পারক্সাইড যা দাঁত সাদা করার অনেক উপাদানে পাওয়া যায়, অ্যালকোহল যা মাউথওয়াশে পাওয়া যায়, বেকিং সোডা যা অনেক টুথপেস্টে থাকে এবং দারুচিনি চুইংগামে পাওয়া যায়। এর মধ্যে যে কোনো একটির জন্য আপনার জিহ্বা ফুলে যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে বুঝবেন আপনার আলসারের সমস্যা হয়েছে

আপনি যদি বুঝতে না পারেন যে কোন উপাদানটির কারণে আপনার এই সমস্যা হচ্ছে বা জিহ্বা ফুলে যায় কেন তাহলে আপনার চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এর কাছে গিয়ে একটি অ্যালার্জি পরীক্ষা করতে পারেন। এতে খুব সহজে জানতে পারবেন যে আপনার কোনটাতে অ্যালার্জি আছে। অ্যালার্জির কারণে যদি আপনার জিহ্বা ফুলে যায় তাহলে সাথে আরো কিছু সমস্যা হতে পারেঃ

  • ঠোঁট ও গলা ফোলা
  • ত্বকে চুলকানি ও লাল দাগ
  • মাথা ঘোরা
  • পেটে ব্যথা বা ডায়রিয়া

নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও হতে পারে

আপনি যদি অন্য কোনো সমস্যার জন্য কিছু ওষুধ খান তাহলে সেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জিহ্বা ফুলে যাওয়ার যত কারণ আছে তার মধ্যে একটি হতে পারে। অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে এমন ওষুধগুলি এবং রক্তচাপের জন্য নেওয়া ওষুধ ACE-I ইনহিবিটর নিলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে জিহ্বা ফুলে যেতে পারে ৷ তবে এটা খুব খারাপ বা গুরুতর হতে পারে।

এছাড়াও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যেমন অ্যাসপিরিন ও আইবুপ্রোফেন এবং অ্যান্টিবায়োটিক যেমন পেনিসিলিন ও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। তাই যদি এসব খাওয়ার ফলে আপনার জিহ্বা ফুলে যায় তাহলে তখনই এগুলা খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জিহ্বা ফুলে যায় কেন জানতে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

শরীরে ভিটামিনের অভাবে হতে পারে

ভিটামিন বি 12 এর অভাব হলে জিহ্বা ফোলা, লাল, গরুর মত জিহ্বা হতে পারে। এছাড়াও আপনি হাত ও পায়ে ঝাঁকুনি, ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন। এদিকে আয়রনের ঘাটতির কারণে জিহ্বা কালশিটে, মসৃণ এবং ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে এবং এর সাথে ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এবং খুব ফ্যাকাশে ত্বক হতে পারে।

মাংস, মাছ, ডিম, শাক, মটরশুটি এবং মসুর ডালের মতো খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এই ভিটামিনের অভাব দূর করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে প্রধান ভিটামিন এবং খনিজ ঘাটতিগুলি ঠিক হয়েছে কিনা শেষ পর্যন্ত আপনার ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।

পেটের অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয়ে আপনার জিহ্বা ফুলে যেতে পারে

পেটের অ্যাসিড যা আমাদের গলাতে এসে জিহ্বাকে জ্বালাতন করতে পারে এবং ফুলে যেতে পারে। আপনি যদি আপনার মুখের মধ্যে একটি অম্লীয় বা তিক্ত স্বাদ এবং গলায় জ্বালা অনুভব করেন তাহলে তা পেটের অ্যাসিড এর কারণে হয়ে থাকে যাকে আমরা সাধারণত গ্যাস বলে জানি৷ অ্যাসিডিক বা মশলাদার খাবার এবং সকল ধরনের পানীয় থেকে দূরে থাকলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এছাড়াও তাই অ্যান্টাসিড খাওয়া কমানো, বেশি ঘন ঘন খাবার খাওয়া এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। জিহ্বা ফুলে যায় কেন তার এটাও একটা কারণ হতে পারে।

আপনার জিহ্বা যদি সংক্রমিত হয়

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ একটি কাটা স্থান থেকে শুরু হতে পারে। দাঁতের কামড়ে হওয়া ক্ষত হলে ব্যাকটেরিয়া তখন একটি প্রবেশ পথ হিসাবে এটি ব্যবহার করে। এর কারণে আপনার জিহ্বা লাল এবং কালশিটে সাথে ফুলে যেতে পারে এবং যদি সংক্রমণ গভীর হয় তাহলে এটি একটি ফোড়া হতে পারে যার ফলে ফোলাভাবের সাথে খুব ব্যথাও হতে পারে।

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। এই কারণে যদি আপনার জিহ্বা ফুলে যায় তাহলে খুব জটিল হতে পারে। যদি বড় ফোড়া হয়ে যায় তাহলে অপারেশন করতে হতেও পারে।

জিহ্বার ভাইরাল সংক্রমণের মধ্যে হারপিস একটি। প্রথম সংক্রমণটি সবচেয়ে খারাপ এবং মুখের ভিতরে একটার বেশি বেদনাদায়ক ফোস্কা সেইসাথে জ্বর এবং অস্থিরতা হতে পারে৷ জিহ্বা ফুলে যায় কেন বা জিহ্বা ফুলে যাওয়ার যত কারণ আছে তারমধ্যে এটা খুব খারাপ ও জটিল কারণ হতে পারে।

জিহ্বা ফোলা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে

জিহ্বার ক্যান্সার শুরু হয় সাধারণত সাদা বা লাল দাগ বা জিহ্বায় একটি ছোট পিণ্ড বা আলসার দিয়ে। যারা বেশি ধূমপান বা অ্যালকোহল পান করেন তাদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। জিহ্বা ক্যান্সারের কারণেও জিহ্বা ফুলে যেতে পারে। আর এটা খুব গুরুতর সমস্যা হতে পারে। তাই জিহ্বা যদি এই সব লক্ষণ সহ ফুলে যায় তাহলে অবহেলা না করে চিকিৎসা করুন।
যদি প্রাথমিক পর্যায়ে এটা সরিয়ে ফেলা হয় তাহলে এটি সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য বা একবারে ভালো হয়ে যায়৷ আর যদি প্রাথমিক ভাবে এটার চিকিৎসা করা না হয় তাহলে ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। এই কারণেই আপনার যদি অবিরাম জিহ্বার ব্যথা হয় বা এমন একটি ফোসকা থাকে তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করুন।

জিহ্বা ফুলে যায় কেন - শেষ কথা

জিহ্বা ফুলে যাওয়ার যত কারণ তার মধ্যে অ্যালার্জি, সংক্রমণ, ট্রমা, ওষুধের প্রতিক্রিয়া, অটোইমিউন রোগ বা অনেক বিরল রোগ থাকতে পারে। যদিও জিহ্বার ক্যান্সার খুব কম তারপরেও এর কারণে জিহ্বা ফুলে যেতে পারে। যদি আপনার জিহ্বা ফুলে থাকে কিন্তু এটা খুব খারাপ না হয় তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে করে নিতে পারেন। তবে যদি ফোলা আরও খারাপ হয় তাহলে আপনাকে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। উপরে আমরা জিহ্বা ফুলে যায় কেন বা জিহ্বা ফুলে যাওয়ার কারণ বিস্তারিত আলোচনা করেছি। [জব আইডি=২২৪৯৮]

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url