এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয়

আপনি যদি এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয় কিনা? এ বিষয়টি জানতে চান তাহলে সঠিক জায়গাতে এসেছেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয়? বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয় কিনা? এ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয়? বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয়

এন্ডোমেট্রিওসিস অর্থ

এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয়? বিষয়টি জানার আগে সর্বপ্রথমে আমাদেরকে এন্ডোমেট্রিওসিস অর্থ সম্পর্কে জানতে হবে। কারন আমরা যদি এন্ডোমেট্রিওসিস অর্থ না জানতে পারি তাহলে এ রোগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাবো না। এন্ডোমেট্রিওসিস হল জরায়ুর বাইরে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যেটি সাধারণত জরায়ুর ভেতরে থাকে।

আরো পড়ুনঃ অনলাইন থেকে আয় করার সবচেয়ে সহজ ৪০ টি উপায়

এই রোগ হলে ডিম্বনালী, ডিম্বাশয়, মূত্রশয় বা মলদ্বারের বৃদ্ধি পেতে পারে। জরায়ু গহ্বর এন্ডোমেট্রিক্যাল কোষের সাথে যে রেখা যুক্ত থাকে তা স্ত্রী হরমোন গুলোর প্রভাবে প্রভাবিত হয়। প্রিয় পাঠকগণ আশা করি আপনারা এন্ডোমেট্রিওসিস অর্থ সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা পেয়েছেন।

এন্ডোমেট্রিওসিস কেন হয়?

এন্ডোমেট্রিওসিস কেন হয়? বিষয়টি সম্পর্কে একজন নারীর জন্য জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের শরীরে ঋতুচক্রের সময় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে এন্ডোমেট্রিয়াম বা জরায়ুর ভেতরের লাইনিং পুরু হয়ে যায়। এর ফলে ফার্টিলাইজড ওভাম বা ডিম্বানু যাতে সহজে গেঁথে যায়, সেই ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। গর্ভধারণ না হলে, এই পুরু হয়ে যাওয়া এন্ডোমেট্রিয়াম খসে পড়ে এবং সেটি ঋতুস্রাব হিসেবে বেরিয়ে আসে।

পশ্চাৎগামী ঋতুস্রাব এন্ডোমেট্রিওসিস এর মধ্যে একটপিক এন্ডোমেট্রিয়াম গঠনের জন্য সর্বাধিক ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব। সাধারণত এই প্রক্রিয়ায় কোন মহিলার মাসিক ঋতুস্রাবের বেশ কিছু এন্ডোমেট্রিয়াল ধ্বংসাবশেষ পুনরায় ডিম্বনালী গুলোর মাধ্যমে গর্ভাশ হয়ে বেরিয়ে আসে এবং এগুলো পেটের অভ্যন্তরীণে সংযুক্ত হয় যার কারণে এন্ডোমেট্রিওসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

অনেক সময় পরিবেশগত প্রভাবের কারণে মহিলাদের এন্ডোমেট্রিওসিস হয়ে থাকে। সাধারণত এই রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিষাক্ত পরিবেশ কে বিবেচনা করা হয়। যা আমাদের শরীর এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে থাকে।

এন্ডোমেট্রিওসিসের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের। এ ছাড়া সন্তান হয় নি প্রথম সন্তান নিতে বিলম্ব করেছেন জরায়ুতে জন্মগতভাবে ত্রুটি রয়েছে কিংবা এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে এমন নারীরা এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত হতে পারেন।

এন্ডোমেট্রিওসিসের 20টি লক্ষণ

এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ নির্ণয় করার জন্য এবং এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয়? বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে আমাদেরকে সর্বপ্রথমে এন্ডোমেট্রিওসিসের 20টি লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে। আপনাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এন্ডোমেট্রিওসিসের 20টি লক্ষণ গুলোর নিচে উল্লেখ করা হলো।

১। ঋতু চলাকালীন সময়ে মূত্র বা মলত্যাগের সময় যন্ত্রণা হওয়া।

২। পায়ুদ্বারে এমনকি যৌন মিলনের পরে অসহ্য যন্ত্রণা হওয়া।

৩। যন্ত্রণাদায়ক ঋতু ও ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে অত্যাধিক রক্তপাত হওয়া।

৪। অতিরিক্ত পরিমাণে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।

৫। ডায়রিয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা যাওয়া।

৬। এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ এক জন নারীর স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও জীবন নষ্ট করে দেয়। ফলে আসে ক্লান্তি, হতাশা এবং মানসিক অবসাদ।

৭। তলপেট ও পেলভিসে অসহ্যভব্যথা। ঋতুস্রাবের শুরুর তিন-চারদিন আগে থেকেই যন্ত্রণা শুরু হয়৷

৮। ঋতুচক্রের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত৷

৯। যৌন মিলনের সময় বা পরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা এবং অস্বস্তি।

১০। কোমর, তলপেট, পিঠে এক টানা ব্যথা চলতে থাকে।

১১। মূত্রথলি বা পায়ুদ্বারে ব্যথা।

১২। এন্ডোমেট্রিওসিসের সবচেয়ে বড় জটিলতা হল বন্ধ্যাত্ব।

১৩। বমি ভাব হওয়া এবং মাঝেমধ্যে বমি হওয়া।

১৪। মলত্যাগ করার সময় প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা হওয়া।

১৫। এই সমস্যা হলে অতিরিক্ত ব্লীটিং এর জন্য প্রচন্ড পরিমাণে মাথা ব্যথা হতে পারে। যে কোন কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয় মেজাজ খিটখিত হয়ে যায়।

১৬। অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যথা হয় যা সহ্য করার মত হয় না যার ফলে অনেকের ডিপ্রেশনে চলে যায়।

১৭। এই সমস্যা হলে বন্ধ্যাত্ব হওয়া প্রায় অনিবার্য।

এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয়

যে সকল নারীদের উপরের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় সাধারণত তাদের এই রোগটি হয়ে থাকে। সেই সময় অনেকেই এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয়? এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকে। অবস্থার তীব্রতা এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে চিকিৎসার মধ্যে ওষুধ এবং অস্ত্রোপচার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। বিভিন্ন চিকিৎসার পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ যে দুটি পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝবেন আপনার কিডনীর সমস্যা

ডাক্তার বেদনাদায়ক মাসিক ক্র্যাম্পগুলি কমাতে আইবুপ্রোফেনের মতো ব্যথানাশক ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন। যে কোন ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে। যদি এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে ওষুধের মাধ্যমে এটি ভালো করা সম্ভব। না হলে আরো অনেক রকম চিকিৎসা রয়েছে সেগুলোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

হরমোন থেরাপিঃ

১। সাধারণত এন্ডোমেট্রিওসিসের আক্রান্ত রোগী গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা না করলে হরমোন থেরাপির পরামর্শ দেওয়া হয়।

২। হরমোনের ওষুধগুলি এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুর বৃদ্ধিকে ধীর করে দিতে পারে এবং নতুন এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু ইমপ্লান্ট গঠনে বাধা দিতে পারে।

৩। এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন হরমোন থেরাপি হল- হরমোনাল গর্ভনিরোধক: হরমোনজনিত গর্ভনিরোধক ব্যবহার করে যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, প্যাচ এবং যোনি রিংগুলি মাসিকের সময় ব্যথা এবং ভারী রক্তপাত কমাতে বা দূর করতে সাহায্য করে।

৪। প্রোজেস্টিন থেরাপি- প্রোজেস্টিন থেরাপি যেমন একটি অন্তঃসত্ত্বা ডিভাইস গর্ভনিরোধক ইনজেকশন, প্রোজেস্টিন পিল মাসিকের সময়কাল এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ইমপ্লান্টের বৃদ্ধি বন্ধ করতে পারে।

এন্ডোমেট্রিওসিস এবং বন্ধ্যাত্ব

এন্ডোমেট্রিওসিস এবং বন্ধ্যাত্ব প্রকৃতপক্ষে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন যে, ঠিক কোন কেসে কি কারণে বন্ধ্যাত্ব হয়। তবে এন্ডোমেট্রিওসিসে মূল যে সমস্যা হয় তা হল জননাঙ্গের বিভিন্ন অংশের স্বাভাবিক এনাটমি বা গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন। এন্ডোমেট্রিওসিসে এক্টোপিক টিস্যু জমা হয় জননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে। ফলে এক অঙ্গের সাথে আরেক অঙ্গ জড়িয়ে যায়।

যার ফলে বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গাংশ তার স্বাভাবিক গঠন এবং অবস্থান থেকে সরে যায়। এই অবস্থানগত অস্বাভাবিকতার কারণে ডিম্বক নিঃসরণ হওয়ার পর ডিম্বনালীতে প্রবেশে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক সময় দেখা যায় ডিম্বনালী ডিম্বাশয় থেকে অনেক দুরে জরায়ুর পেছন দিকে বা অন্য কোন স্থানে আটকে আছে। ফলে ডিম্বক ডিম্বনালীতে প্রবেশ করতেই পারে না।

আবার কোনভাবে ডিম্বনালীতে প্রবেশ করতে পারলেও গঠনগত পরিবর্তনের কারণে জায়গামতো পৌঁছাতে পারে না। এন্ডোমেট্রিওসিস যেহেতু একটি হরমোন প্রভাবিত প্রদাহজনিত রোগ, ফলে প্রদাহ থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কারণে জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে শুক্রাণুর স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হয়। যদিওবা কোনভাবে ডিম্বানু এবং শুক্রাণু মিলিত হয়ে ভ্রূণ তৈরি করে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি এন্ডোমেট্রিওসিস এবং বন্ধ্যাত্ব বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

এন্ডোমেট্রিয়াম নরমাল সাইজ

এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয় কিনা আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এন্ডোমেট্রিয়াম নরমাল সাইজ সম্পর্কে অনেকেই দেখতে চাই। আপনাদের জানার সুবিধার্থে এন্ডোমেট্রিয়াম নরমাল সাইজ এর চিত্র নিচে উল্লেখ করা হলো।

ছবিঃ drdeeptiasthana

এন্ডোমেট্রিওসিস এর হোমিও চিকিৎসা

প্রাচীনকাল থেকে যেকোনো রোগের চিকিৎসা হিসেবে হোমিও চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এন্ডোমেট্রিওসিস এর হোমিও চিকিৎসা এর মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। যদি এটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে কোন ভালো হোমিও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এরপরে সেখানে আপনার লক্ষণ এবং সমস্যাগুলো বললে এন্ডোমেট্রিওসিস এর হোমিও চিকিৎসা মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

আরো পড়ুনঃ আমড়া খাওয়ার উপকারিতা - আমড়া খাওয়ার নিয়ম

যেহেতু এর কারণে আপনি সারা জীবনের জন্য সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন তাই খুবই সাবধানতার সাথে এই রোগের চিকিৎসা করতে হবে। সব থেকে বেশি ভালো হয় কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানো।

আমাদের শেষ কথাঃ এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয়

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে এন্ডোমেট্রিওসিস এর হোমিও চিকিৎসা, এন্ডোমেট্রিয়াম নরমাল সাইজ, এন্ডোমেট্রিওসিস এবং বন্ধ্যাত্ব, এন্ডোমেট্রিওসিসের 20টি লক্ষণ, এন্ডোমেট্রিওসিস কেন হয়? এন্ডোমেট্রিওসিস অর্থ, এন্ডোমেট্রিওসিস কি ঔষধে ভালো হয়? সকল প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি উক্ত বিষয়টি জানতে পেরেছেন। যদি না পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন ধন্যবাদ। ২০৭৯১

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url