উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়াম - তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধ

 

গবেষণা বলে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়ামগুলো দিনে কয়েকবার অনুশীলন করলে ক্রমশ উচ্চ রক্তচাপ কমতে থাকে। তাই সকল বয়সী মানুষ যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা চাইলে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়ামগুলো অনুসরণ করতে পারে। আপনি কি জানেন উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়াম কি কি? চলুন তবে ব্যায়ামগুলো জেনে নেওয়া যাক।
চলুন আজ এই পোস্ট থেকে জেনে নিই কিভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়ামগুলো করবেন। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়, তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধ কি, উচ্চ রক্তচাপ কমানোর খাবার কি এসকল বিষয়ও এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। তাই বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্র - উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়াম - তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধ 

আমরা জানি, মানবদেহে ধমনী ও শিরার মাধ্যমে সারাদেহে রক্ত সরবরাহ হয়। হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে যদি রক্ত প্রবাহের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে তখন সেটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বলা হয়। একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। এই উচ্চতর মানটিকে বলা হয় সিস্টোলিক চাপ এবং নিম্নতর মানটিকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলা হয়।
এই মান যদি কারও ১৪০/৯০ বা তার উপরে থাকে তবে বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা রয়েছে। আর স্বাভাবিকের চেয়ে যাদের মান নিচে থাকবে তাদের লো ব্লাড প্রেশার রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়ামগুলো অনুসরণ করলে এই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সাধারণত বাজে খাদ্যাভ্যাস, অস্বাভাবিক জীবনযাপন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা ইত্যাদি কারণে উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা হয়ে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়াম যেভাবে করবেন | সিস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর উপায় 

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর অসংখ্য ব্যায়াম রয়েছে। যা নিয়মিত অনুসরণ করলে আপনি অনেক উপকার পাবেন। কি সেই ব্যায়াম গুলো চলুন জেনে নিই।
  1. নিয়মিত হাঁটা ও দৌড়ানো: আপনি প্রত্যেকদিন সময় করে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। সময় পেলে সকালবেলা হালকা জগিংও করতে পারেন। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অনেক সহায়ক। কারণ হাঁটলে বা দৌড়ালে শরীরে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে, হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হয়। ফলে ধমনীতে রক্তচাপ কমে। সিস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর উপায় হিসাবে নিয়মিত হাঁটলে আপনার সিস্টোলিক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  2. সুখাসন: এটি এক প্রকার যোগব্যায়াম। এর ফলে শরীর ও মনে এক ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মন-মেজাজ ভাল থাকে। দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়া যায়। শিরদাঁড়া সোজা রেখে দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে একদম বাবু হয়ে বসুন। ধ্যানের ভঙ্গিতে দুই হাত দুই হাঁটুর উপরে টান করে ছড়িয়ে দিন। এই সুখাসন ব্যায়ামটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
  3. হামাগুড়ি দিয়ে বসা: দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ থাকতে পারেন। এতে করে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকব ও হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
  4. সাইক্লিং: সাইক্লিং বহির্বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়াম হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। আপনি দিনে ২০-৩০ মিনিট সাইক্লিং করলে খুব সহজ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
  5. সাঁতার কাটা: শরীর সুস্থ ও সবল রাখার সবচেয়ে কার্যকরী ব্যায়াম হলো সাঁতার কাটা। সাঁতার কাটলে একসাথে সকল অঙ্গের ব্যায়াম হয়ে যায়। তাই সপ্তাহে অন্তত ১ বার যদি সাঁতার কাটেন তাহলে উচ্চ রক্তচাপ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে আশা করা যায়। 

তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধ | তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় | উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ভেষজ ঔষধ 

আপনারা ইতোমধ্যে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়াম কিভাবে করবেন তা জেনে গেছেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনলে এবং তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধগুলো প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সেবন করলে উচ্চ রক্তচাপ অনেকটাই আপনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। এছাড়াও তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় রয়েছে প্রচুর। চলুন সে সকল উপায়গুলো এখন বিস্তারিত জেনে নিই।
  1. তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধ সেবন: তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধ হিসাবে ডাক্তাররা যে ঔষধটি বেশি সাজেস্ট করে থাকেন তা হলো অম্লেসিপ ২০ এমজি ট্যাবলেট। এটি এনজিওটেনিসন n2 রিসেপ্টর ব্লকার গ্রুপের ঔষধ। এটি রক্তচাপকে শিথিল করে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। Osartil (50) এই ওষুধটিও দ্রুততার সহিত উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। Propanonol নামক ঔষধটি হৃদপিণ্ডের সংকোচ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর আরও বিভিন্ন মাত্রার ঔষধ রয়েছে। সিস্টোলিক রক্তচাপ কমানোর উপায় হিসাবেও আমরা বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে থাকি। কার্যকর ফলাফল পেতে সকল ঔষধই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
  2. খাবারে লবণ কম খাওয়া: হাই ব্লাড প্রেশারের জন্য লবণ অনেকটাই দায়ী। তাই কাঁচা লবণ পরিহার করতে হবে। কম লবণযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  3. তৈলাক্ত খাবার পরিহার: ধুমপান, অস্বাস্থ্যকর তৈলাক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এসকল খাবার পরিহার করতে হবে।
  4. ওজন নিয়ন্ত্রণ: সুস্থ থাকার পূর্বশর্ত সঠিক শারীরিক ওজন বজায় রাখা। সেজন্য আপনি উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়ামগুলো রুটিন মাফিক করবেন। তাহলে শরীর ফিট থাকবে ও কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। 
  5. বসে থাকার কাজ কম করা: গবেষণায় দেখা গেছে যারা অধিক সময় বসে থেকে কাজ করে তাদের উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, স্থুলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই সারাক্ষণ বসে কোনো কাজ না করে কাজের ফাঁকে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়ামগুলো অনুসরণ করতে পারেন। আশা করি রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে।
  6. পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া: পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। কারণ পটাশিয়াম লবণের পরিমাণ কমায় এবং রক্তনালীর প্রাচীর টানটান প্রসারিত হতে দেয়না। পালংশাক, কলা ও কিসমিসে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে।
  7. মানসিক চাপ কমানো: উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানসিক চাপ। মানসিক চাপ বেশি থাকলে উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা হতে পারে। আপনি ঘড়ি ধরে মেডিটেশনের মাধ্যমে হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে পারেন। সবসময় চেষ্টা করুন টেনশনমুক্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে।
  8. ভেষজ ঔষধ সেবন: উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ভেষজ ঔষধগুলো সেবন করলেও আপনি ভালো ফলাফল পাবেন। অশ্বগন্ধা, আমলকি, ত্রিফলা, অর্জুন, থানকুনি পাতা এসকল ভেষজগুলো যদি আপনি খান তবে তা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বেশ সহায়ক হবে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে লেবু ব্যাপক ভুমিকা রাখে। প্রত্যেক বেলা খাবারের সাথে তাই লেবু রাখতে পারেন। অনেকেই এগুলো খেয়ে উপকৃত হয়েছেন।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর খাবার | উচ্চ রক্তচাপ কমাতে লেবু

ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে অনেক রোগ সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের সবসময় ব্যালেন্স ডায়েট অনুসরণ করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যালেন্স ডায়েটের পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়ামগুলোও করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর বিশেষ কিছু খাবার আছে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে লেবু বেশ কার্যকরী। নিচে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর খাবারগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো।
  • রসুন
  • মধু
  • মেথি
  • টক জাতীয় ফল
  • টমেটো
  • গাজর
  • ধনে পাতা
  • তিসির বীজ
  • ব্রকোলি 
  • সবজি
  • কমলালেবু 
  • বেদানা
  • তুলসি
  • পালং শাক
  • নারিকেলের পানি
  • তরমুজ 
এই খাবারগুলো যদি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখেন তাহলে অবশ্যই তা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে অনেক কার্যকরী হবে।

উপসংহার - উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়াম | তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধ

আশা করি পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে আপনি উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়ামগুলো কিভাবে করবেন, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কি খাবেন, তাৎক্ষণিক  উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধগুলো কি এসকল বিষয়গুলো পুরোপুরি জেনে গেছেন। সর্বোপরি যদি আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে সুন্দর জীবনযাপন করি তাহলে খুব সহজেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। পোস্টটি ভালো লাগলে এখনি সব জায়গায় শেয়ার করে দিন। এই ধরনের আরও স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url