ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে

আমাদের বিয়ে করার জন্য ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রথমে জানা অত্যন্ত জরুরী। ইসলাম ধর্ম এমন একটি ধর্ম যেখানে প্রতিটি কাজের একটি সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। বিয়ে করার ক্ষেত্রেও ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে? এগুলো জেনে তারপরে বিয়ে করতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলে ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে? তা আলোচনা করা হবে।

আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন এবং বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে? সে সম্পর্কে আগে জেনে নিন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে? তা জেনে নেওয়া যাক।

কনটেন্ট সূচিপত্রঃ ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে

ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছেঃ ভূমিকা

বিয়ে হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পৃথিবীতে এই পর্যন্ত যত নবী এবং রাসুল এসেছে সকলের সুন্নত হলো বিয়ে। বিয়ে কার সাথে হবে কোথায় হবে এটি সম্পূর্ণ আমাদের ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। কারণ আগে থেকে আল্লাহ তা'আলা এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে রেখে দিয়েছেন। বিয়ে করার জন্য বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে? অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেলে জানব।

আরো পড়ুনঃ বাংলা আর্টিকেল লিখে আয় পেমেন্ট বিকাশে মাসে ১৫০০০

এছাড়া এই আর্টিকেলে আপনি আরো জানতে পারবেন ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ে করার নিয়ম, কিভাবে বুঝবেন আপনার জন্য বিয়ে করা ফরজ হয়েছে? ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ের গুরুত্ব কি? এই বিষয়গুলো। তাহলে চলুন বিয়ে করার আগে অবশ্যই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ে করার নিয়ম

কোন পুরুষের যদি বিয়ে করার জন্য পাত্রী পছন্দ হয় তাহলে সুন্নতি পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে হবে। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেছেন, "কোন পুরুষ যদি কোন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাহলে সর্বপ্রথম তার সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। যদি এ ব্যাপারে তার প্রশংসা করা হয় তাহলে তার দিন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। দ্বীন সম্পর্কে যদি প্রশংসিত হয় তাহলে বিয়ে করবে অন্যথায় দ্বীনের কারণে প্রত্যাখান করবে।"

কিন্তু এমন করা উচিত নয় যে প্রথমে দিন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে আর এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হলে সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। এরপর সৌন্দর্যের ব্যাপারে প্রশংসিত না হলে ফিরিয়ে দেবে। যদি এমনটা হয় তাহলে এই প্রত্যাখ্যান হবে সৌন্দর্যের কারণে, দিনের কারণে নয়। বিয়ে করার পূর্বে পাত্র পাত্রী অর্থাৎ যারা একসঙ্গে ঘর সংসার করবে তাদের সম্মতি থাকতে হবে।

ছেলেমেয়েদের সম্মতি না নিয়ে তাদের বিয়ে করতে বাধ্য করা উচিত নয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেন, "হে ঈমানদাররা, তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে।"{সূরা নিসাঃ ১৯} এরপরে অভিভাবক বা যিনি বিবাহ করাবেন তিনি বিবাহের খুতবা পাঠ করবেন।

বর ও কনে একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া। রাসুল (সাঃ) বলেন, "বিধবাকে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে তাকে বলে তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিয়ে দেয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব? তিনি বললেন, চুপ করে থাকাটাই তার সম্মতি।" {বুখারি, হাদিসঃ ৪৭৪১}

শাওয়াল মাসে এবং জুমুআর দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা সুন্নত। তবে যেকোন মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা জায়েয আছে। {মুসলিম, হাদীসঃ ১৪২৩} এরপর উপস্থিত সবাই পৃথকভাবে সুন্নতি দোয়া পাঠ করবে।

আরবি উচ্চারণঃ বা-রাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বা-রাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খায়ের। অর্থঃ আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত দিন ও তোমাদের দুজনকে কল্যাণের সঙ্গে মিলিত করুন। {তিরমিজি, হাদিসঃ ১০৯১} আশা করি উপরের ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ে করার নিয়ম অনুযায়ী আপনি আপনার বিয়ে সম্পন্ন করবেন।

কিভাবে বুঝবেন আপনার জন্য বিয়ে করা ফরজ হয়েছে

আমরা সকলে জানি যে সঠিক বিয়ে হল একটি পবিত্র বন্ধন। একজন ব্যক্তির শারীরিক মানসিক ও আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে বিয়ের হুকুম। সাধারণত একজন মানুষ যখন শারীরিক মানসিক এবং আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় তখন তার ওপর বিয়ে করা ফরজ হয়ে যায়। আপনারা অনেকেই কিভাবে বুঝবেন আপনার জন্য বিয়ে করা ফরজ হয়েছে? এ বিষয়ে জানেন না।

সকলের ক্ষেত্রে বিয়ের হুকুম একরকম হয় না। এখানে ব্যক্তি ভেদে বিয়ের ফরজ, ওয়াজিব সুন্নতে মুয়াক্কাদা, মুবাহ, মাকরুহ এবং হারাম বলে বিবেচিত হয়। আপনি যদি বুঝতে চান আপনার জন্য বিয়ের ফরজ হয়েছে কিনা তাহলে চারটি শর্ত পূরণ হয়েছে কিনা দেখুন।

আরো পড়ুনঃ সকালে ব্যায়াম করার ১০টি উপকারিতা - সকালে ব্যায়াম করার দশটি নিয়ম

১। যে ব্যক্তি বিয়ে না করলে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে সাধারণত তার জন্য বিয়ে করা ফরজ হয়ে যায়।

২। ওই ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা ফরজ যে ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য রোজা রাখতে অক্ষম।

৩। সাধারণত যে ব্যক্তির বাদী গ্রহণের সুযোগ নেই তার জন্য বিয়ে করা ফরজ হয়ে যায়।

৪। যে ব্যক্তি বৈধ অবস্থায় স্ত্রীর মোহর এবং ভরণপোষণ ব্যয় করতে সক্ষম সাধারণত তার জন্য বিয়ে করা ফরজ।

ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে

বিয়ে করার আগে অবশ্যই আমাদেরকে ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে? এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ সঠিক এবং সুন্নতি বিয়ে করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ে হল সারা জীবনের জন্য একটি সম্পর্ক।

১। বর কনে উভয়কে গ্রহণযোগ্য ভাবে নির্দিষ্ট করে নেওয়া। যেন বর স্ত্রীকে গ্রহণ করে নেয় আবার স্ত্রী যেন স্বামীকে গ্রহণ করে নেয় এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।

২। বর এবং কনে একে অন্যের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, "স্বামীহারা নারী কে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুল আল্লাহ সাঃ কেমন করে তার সম্মতি জানবো? তিনি বললেন, লজ্জা অবস্থায় যদি চুপ করে থাকে তাহলে এটাই তার সম্মতি।"{বোখারীঃ ৪৭৪১}

৩। বিয়ের চুক্তির সময় সাক্ষী রাখতে হবে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, "অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই।"{সহীহ জামেঃ ৭৫৫৮} সাক্ষীর মধ্যে দুজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ দুজন নারী সাক্ষী হতে হবে।

৪। বিয়ের চুক্তি করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হবে। যেহেতু আল্লাহতালা বিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশনা জারি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,"আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী পুরুষদের বিবাহ দাও।"{সূরা নূরঃ ২৪ঃ৩২}

ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ের গুরুত্ব কি

আমরা জানি যে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যদি একজন পুরুষের সামর্থ্য থাকে। সাধারণত একজন পুরুষের যদি শারীরিক মানসিক এবং আর্থিক দিক থেকে সামর্থ্য থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই বিয়ে করতে হবে। আমরা এখন ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ের গুরুত্ব কি? এ বিষয়ে সম্পর্কে জানব।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ণনা করেন রাসুল (সাঃ) বলেন, "হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মাঝে যারা বিয়ে করতে সক্ষম তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতায় অধিক সহায়ক। আর যে বিয়ে করতে সক্ষম নয় সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা তার যৌনবাসনাকে দমিত করবে।"{সহিহ বুখারিঃ ২/৭৫৮}

কিছু সাহাবি নবীজি (সাঃ) এর কাছে তাদের যৌনবাসনাকে খতম করে দিতে অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে এটা করতে নিষেধ করে দিলেন এবং বিয়ে না করাকে জীবন থেকে পলায়ন করা আখ্যা দিয়েছেন। এজন্য ইসলাম জীবন থেকে পলায়ন করাকে অপছন্দ ঘোষণা করেছে।

নবী কারিম (সাঃ) বলেন, "মানুষের কি হলো? তারা এমন এমন কথা বলে। কিন্তু আমি নামাজ পড়ি এবং ঘুমাই, নফল রোজা রাখি, আবার কখনও রাখি না। আবার বিয়ে-শাদিও করি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।" {সহিহ মুসলিমঃ ১৪০১}

আরো পড়ুনঃ ১১ টি উপায়ে আর্টিকেল লিখে আয় করার উপায় ২০২৩

বিয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদাই পুরা হয় না, বরং অন্তরের প্রশান্তি মানসিক প্রশান্তিসহ সব রকমের প্রশান্তি অর্জিত হয় এতে সহজতরভাবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, "তার এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে শান্তি লাভ করো এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর ভেতর নিদর্শন আছে সেসব লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।" {সূরা রূমঃ ২১}

ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছেঃ উপসংহার

ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ে করার নিয়ম, কিভাবে বুঝবেন আপনার জন্য বিয়ে করা ফরজ হয়েছে? ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ের গুরুত্ব কি? ইসলামে বিয়ের জন্য কি কি বিধান-শর্ত আছে? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।

আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে সেই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকুন। ২০৮৭৬

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url